সবুজ রসায়ন: পার্শ্ব উৎপাদ ও ক্ষতিকর বর্জ্য হ্রাস করে কম খরচে অধিক পরিবেশবান্ধব, কম পরিবেশ দূষণ করে এবং ঝুঁকি হ্রাস করে সময়োপযোগী অধিক উৎপাদ তৈরি করার রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে সবুজ রসায়ন (Green Chemistry) বলে।
১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী পল টি অ্যানাস্তাস এবং জন সি ওয়ারনার সবুজ রসায়নের বিষয়টি প্রস্তাব করেন ৷
রাসায়নিক দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য হাজার ১৯৯২ সাল থেকে সবুজ রসায়ন এর সূচনা হয়েছে।
সবুজ রসায়ন এর মূল লক্ষ্য হলো রসায়নশাস্ত্র ও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার প্রচলিত ধ্যান-ধারণা কাজে লাগিয়ে বিকল্প চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তিগত কৌশল প্রয়োগ করে পরিবেশ দূষণ না ঘটিয়ে কাঙ্খিত রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা।
এটি পরিবেশ রসায়ন থেকে ভিন্ন।
সবুজ রসায়নের মূলনীতি:
সবুজ রসায়ন এমন একটি গবেষণাদর্শন, যার উদ্দেশ্য এমন রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অবলম্বন করা যাতে শিল্পজাত বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং শক্তির অপচয় হ্রাস পায়।
এতে সবুজ রসায়নের ১২ টি মূলমন্ত্র রয়েছে ৷ যথা:
১৷ বর্জ্য পদার্থ রোধকরণ
২৷ সর্বোত্তম অ্যাটম ইকনমি
৩৷ ন্যূনতম ঝুঁকির পদ্ধতির ব্যবহার
৪৷ নিরাপদ কেমিক্যাল পরিকল্পনা
৫৷ নিরাপদ দ্রাবক ব্যবহার
৬৷ বিক্রিয়ার শক্তি দক্ষতা পরিকল্পনা
৭৷ নবায়নযোগ্য কাঁচামাল ব্যবহার
৮৷ ন্যূনতম উপজাতক
৯৷ প্রভাবশালী প্রয়োগ
১০৷ প্রাকৃতিক রূপান্তর পরিকল্পনা
১১৷ যথাসময়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ
১২৷ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ
১. বর্জ্য পদার্থ প্রতিরোধ: বর্জ্য এবং দূষণ সৃষ্টির পরে বিশোধন না করে সৃষ্টির পূর্বে নিয়ন্ত্রণ করা শ্রেয়। ফলে এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয় এবং পরিবেশ দূষণ রোধ হয়।
২. সর্বোচ্চ পরিমাণ উৎপাদ প্রাপ্তির পদ্ধতি ব্যবহার: সাংশ্লেষিক পদ্ধতিকে এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে করে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সর্বোচ্চ পরিমাণ বিকারকই উৎপাদে পরিণত হয়।
৩. ন্যূনতম ঝুঁকির পদ্ধতি ব্যবহার: এমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে যার ফলে নন-টক্সিক বিকারক ও নন-টক্সিক বর্জ্য পাওয়া যায় এর ফলে শিল্পক্ষেত্রে কর্মজীবীদের নিরাপত্তা বিধান ও পরিবেশ দূষণ হ্রাস পায়।
৪. নিরাপদ রাসায়নিক পদার্থের উদ্ভাবন: রাসায়নিক বিক্রিয়াকে এমন ভাবে পরিবর্তন করতে হবে যাতে করে নিরাপদ রাসায়নিক পদার্থের উদ্ভাবন সম্ভবপর হয়।
৫. নিরাপদ দ্রাবক ব্যবহার: বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত দ্রাবক ও সহায়ক পদার্থ নিরাপদ ও ন্যূনতম হবে।
৬. শক্তি দক্ষতা ডিজাইন: কক্ষ তাপমাত্রা অথবা ন্যূনতম শক্তি ব্যায় করে উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ। ফলে শক্তির অপচয় রোধ হবে এবং শিল্পের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে।
৭. নবায়নযোগ্য কাঁচামাল ব্যবহার: রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কসমূহ নবায়নযোগ্য হলে ভালো হয়। কারণ এতে কাঁচামাল সহজলভ্য হবে এবং উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে।
৮. ন্যূনতম উপজাত সৃষ্টি: রাসায়নিক পদ্ধতির ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন এমনভাবে করতে হবে, যেন ন্যূনতম ধাপ ও উপজাত উৎপন্ন হয়।
৯. প্রভাবকীয় বিকারক: প্রভাবক বিক্রিয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে তাই রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনে অধিকতর ফলপ্রসূ প্রভাবকের উদ্ভাবন অপরিহার্য।
১০. সহজে ভাঙ্গন যোগ্য উৎপাদের ডিজাইন প্রণয়ন: শিল্পজাত পণ্যের ডিজাইন এমন হতে হবে, যেন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পণ্য সহজেই ভাঙ্গনযোগ্য হয়।
১১. যথাসময়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ: টক্সিক উৎপাদের ক্ষেত্রে যথাসময়ে প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। টক্সিক পদার্থ যেন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: রাসায়নিক পদার্থ ও পদ্ধতিগত ত্রুটিজনিত কারণে দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা শিল্পক্ষেত্রে থাকতে হবে।
উদাহরণ:
১। হাইড্রাজিন তৈরির প্রচলিত (পরাতন) পদ্ধতির বিক্রিয়া হলো:
NaOCl + 2 NH3 → H2N-NH2 + NaCl + H2O
হাইড্রাজিন নিম্নলিখিত পদ্ধতিতেও তৈরি করা যায় :
2 NH3 + H2O2 → H2N-NH2 + 2 H2O
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার বদলে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করে হাইড্রাজিন তৈরি করা যায় কারণ এতে পানি ছাড়া আর কোন আনুষঙ্গিক পদার্থ তৈরি হয় না।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সবুজ রসায়নের সাহায্য নিয়ে করা হয়। এখানে পার্শ্ব উৎপাদ হলো নিরাপদতম পদার্থ “পানি”।
২। পলিস্টাইরিন এর ব্লোয়িং এ ওজোন (O3) এবং সিএফসি(CFC) লাগত “ব্লোইং এজেন্ট ” হিসেবে। সবুজ রসায়ন এ এর পরিবর্তে সুপারক্রিটিক্যাল কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়েও কাজ হচ্ছে ।
২০০৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় “জৈব রসায়নে মেটাথেসিস মেথড” আবিষ্কারের জন্যে।[৪] এর সাহায্যে অনেক “স্মার্ট” জিনিস তৈরি করা যাবে সবুজ রসায়নএর পদ্ধতি মেনে।
রাসায়নিক যৌগ তৈরি করার
বিক্রিয়ায় উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা
বিক্রিয়ার সময় কমানো তথা বিক্রিয়াকে দ্রুত করা।
সবুজ রসায়ন সম্পর্কিত একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান নির্দেশিকা:
(গ) এর উত্তরের ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থার শর্ত হিসাবে (i) “একই মাধ্যম” (এখানে বিক্রিয়ক ও উৎপাদ উভয়ই গ্যাস)” উল্লেখ না থাকলে চাপের প্রভাব যত সুন্দর করেই লিখুক না কেনো সে ১ পাবে। বা (ii) “একই মাধ্যম” (এখানে বিক্রিয়ক ও উৎপাদ উভয়ই গ্যাস)” উল্লেখ থাকলে ২ পাবে। বা সমীকরণটি সমতাকৃত করে লিখলেও ২ পাবে। (iii) “একই মাধ্যম” (এখানে বিক্রিয়ক ও উৎপাদ উভয়ই গ্যাস)” উল্লেখসহ সমতাকৃত সমীকরণ লিখে চাপের প্রভাব লিখলে সে ৩ পাবে।
Comments
Post a Comment